A untold Story

  • Post author:

ঘুম

লেখক: ফখরুল ইসলাম

https://www.facebook.com/lalsalu

লাস্ট ৫ টা দিন আমার ঘুম আসছে না। যদিও আমার এখানে ঘুমাতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু ঘুমাতে গেলেই একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠি। বারবার একই দুঃস্বপ্ন। স্যারকে বলে কোন মানসিক ডাক্তার দেখাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে কোন হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যাবে না।
ঘুমের ঔষধ খেয়েও সমস্যা সমাধানের চেস্টা করেছি। তাতেও ঘুম আসছে না। দুই চোখের পাতা এক করলেই সেই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।

আগে আমার পরিচয়টা দেই। আমি গুলশানের একটা প্রমোদ ভবনের কেয়ারটেকার।
প্রমোদ ভবন কেন বললাম? আমি আগে এই স্যারের ফ্যাক্টরির সিকিউরিটি মানে দারোয়ানের চাকরি করতাম। বন্ধের এক দিনে স্যার এলেন। স্যারের আবার চায়ের খুব নেশা। এসেই চা খেতে চাইলেন। ঐদিন স্যারের পিয়ন ছুটিতে ছিলেন। আমি চা বানিয়ে দিলাম। স্যার চা খেয়ে এত খুশি হলেন যে আমার সাথে আধা ঘণ্টা গল্প করলেন। স্যার সাধারণত আমার লেভেলের কারো সাথে কথা বলেন না। সেদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করলেন। যেমন ফ্যাক্টরির জিএম স্যার কখন অফিসে ঢোকেন, কখন বের হন। পিএম স্যারের কোন বাজে স্বভাব আছে কিনা। নাইট ডিউটতে সবাই আসে কিনা। জেনারেটর চালায় ছেলেটা ঠিকমতো ডিউটি করে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। চাকরি জীবনের দুই বছর পার হওয়ার পরে সেদিনই স্যারের প্রথম কথা হলো।

পরের মাসে স্যার আমাকে ডাকলেন। উনি বললেন “লেখাপড়া কদ্দুর জানো?”
আমি বললাম “সেকেন্ড ডিভিশনে বিএ পাস করেছি। ইংলিশের উপর সাইফুর্সের একটা কোর্সও করেছি। ইংরেজি বুঝতে পারি কিন্তু বলতে পারি না।”
“তোমার বলতে হবে না। তুমি কাল থেকে আমার গুলশানের অফিসে ডিউটি করবে।”
সেই থেকে আমার জীবন বদলে গেল। স্যারের গুলশানে একটা অফিস আছে৷ অফিসের আগের পিয়নের চাকরি চলে গেছে কী একটা কারণে। তাই হঠাত আমাকে ফ্যাক্টরি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। হেড অফিসে দুই দিন ডিউটি করার পরে আমাকে পাঠানো হলো গুলশানেরই একটা বাসায়। বিশাল সেই বিল্ডিং এর ৬ তলায় স্যারের বিশাল একটা ফ্ল্যাট আছে। সেই ফ্ল্যাটের ভেতরের খবর খুব কম লোকই জানেন। বিল্ডিং এর অর্ধেক ভাড়াটিয়া বিদেশী। কেউ কারো সাথে কথা বলে না। এক ফ্ল্যাটে কাউকে মেরে ফেললেও আরেক ফ্ল্যাটের কেউ টের পাবে না। ফ্ল্যাটের রান্না ঘরের পাশেই ছোট একটা সার্ভেন্ট রুম, আমি সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে নিলাম। আমার প্রতি প্রথম নির্দেশ ছিল “লুঙ্গি পরা যাবে না। এখানে যতদিন থাকবে ততদিন প্যান্ট, শর্টস পরতে হবে।” অবশ্য এসিওয়ালা ফ্ল্যাটে লুঙ্গি পরতে হয় না। টাকা দিলে আমি লুঙ্গি কেন প্যান্ট পরাও ছেড়ে দিতে পারব।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত চা বানানো ছাড়াও আমার বেশ কিছু কাজ আছে। এই বাসায় স্যার সপ্তাহে ৩/৪ দিন আসেন। সাথে থাকে স্যারের বন্ধু বান্ধবরা। একেকজনের গায়ের পারফিউমের সুগন্ধি একেকরকম। বাসার ভেতরে কয়েকটা অংশ আছে। একটা রুম হল বার। সেখানে দুইটা ফ্রীজ আছে। সেই ফ্রীজ ভর্তি দেশী বিদেশী মদ থাকে। এছাড়া ফ্রীজের বাইরে দুইটা তাকে অনেকগুলো বোতল রাখা আছে। স্যারেরা চলে গেলে আমার প্রথম কাজ হলো গ্লাস ও বোতলের তলায় পড়ে থাকা মদ চেটে চেটে খাওয়া। এর আগে গ্রামে থাকতে একবার গঞ্জে গিয়ে বাংলা মদ খেয়ে এমন বমি করেছিলাম যে….

এই হলো একটা রুমের বর্ণনা। এরপর আসি বাকী ৩ টা রুমের কথায়। এই ৩ টা রুমের ২টায় বিশাল বিশাল খাট আর সোফা আছে। স্যারের সাথে বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সেগুলোর সাথে এই রুম গুলোর তেমন কোন পার্থক্য নেই।
স্যার যেদিনই এখানে আসেন সেদিনই কোন না কোন মেয়ে নিয়ে আসেন। একেকটা মেয়ে যেন ডানা কাটা সুন্দরী। আমি ভালো করে খেয়াল করে দেখেছি এরা কেউই ময়দা সুন্দরী না। একেকজনের গায়ের রং থাকে দুধে আলতার মত। মানুষ কীভাবে এত সুন্দরী হতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আপনারা টিভি সিনেমায় সুন্দরী দেখে অবাক হন। আমি যেসব সুন্দরী দেখি তার তুলনায় টিভির মডেলরা কিছুই না। আর এইসব মেয়েদের পোষাক দেখে বোঝার উপায় নেই তারা ইউরোপে আছে নাকি এদেশে আছে। প্রথম প্রথম মনে প্রশ্ন জাগত, স্যার এতসব সুন্দরী যোগাড় করেন কীভাবে? উত্তর পেয়ে গেলাম কয়দিন পরেই- কয়েজন দালাল স্যারকে এসব মেয়ে সাপ্লাই করে। মাঝে মাঝে এইসব দালালরাও এখানে আসে। দালালদেরকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এরা এই কাজ করে বেড়ায়। দালালদের বেশিরভাগই মধ্য বয়স্ক মহিলা। বোঝা যায়, এক সময় এনারাও এই কাজ করতেন।
আমার মূল কাজ ছিল মুখ বন্ধ রাখা। সেজন্য আমি বেতনের বাইরেও ভালো টাকা পেতাম। এছাড়া আমার নিয়মিত কাজ হল বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার কিনে আনা। একেকটা রেস্টুরেন্টের বিলই আসত ২৪/২৫ হাজার টাকা, তাও একবেলা!

সেদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। খুবই সামান্য ঘটনা। স্যারেরা ৫ বন্ধু এসেছিলেন। ৫ বন্ধুর সাথে একটা মেয়ে ছিল। হঠাত ভেতরে ধ্বস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পাই। নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনলাম। যাক বাবা, আমার স্যারের কিছু হয় নাই। নাহলে আমি প্রস্তুত ছিলাম। স্যারের কিছু হলে কাউকে ছাড়তাম না। এরপর দেখলাম সেই ৫ বন্ধু ঝগড়া করছে। মেয়েটার আর কোন শব্দ পাওয়া গেল না। রুমের বাইরে এসে কয়েক বন্ধু আলোচনা করছে। তাদের মুখে শংকা দেখতে পেলাম। স্যারের মুখে টেনশন দেখেলে আমি খুশি হই। স্যার আমাকে দিয়ে কোন না কোন কাজ করাবেন। কাজ শেষ হলে আমার পকেটে কিছু টাকা দিবেন। সেই টাকাটা আমার বেতনের চেয়ে বেশি থাকে।
হঠাত স্যারের এক বন্ধু আমার দিকে তাকালেন। আমার স্যারকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলেন “এ ছেলেটা কি বিশ্বস্ত?”
স্যার ইংরেজিতেই উত্তর দিলেন “কুকুরকে অবিশ্বাস করতে পারো কিন্তু এ ছেলেকে নয়।” স্যার হয়তো ভুলে গেছেন আমি ইংরেজি বুঝি তবে বলতে পারি না।
দুইজন আমার দিকে এগোলেন “একটা ছোট্ট সমস্যা হয়ে গেছে। শুনলাম তুমি গাড়ী চালানো শিখেছ। তোমাকে একটা প্যাকেট দিব। তোমার কাজ হলো প্যাকেট টা এমন জায়গায় ফেলে দিবে যাতে কেউ টের পাবে না।”
আমি বুঝে নিলাম সেই ‘প্যাকেট’ টা কী? আমি স্যারদের বললাম “আপনারা কোন টেনশন নিয়েন না। জিনিসটা আমিই প্যাকেট করে দিচ্ছি।”
স্যার দুইজন খুব খুশি হলেন। আমিও খুশি হলাম স্যার আমাকে কুকুরের মত বিশ্বাস করেন বলে।
আমি সেই রুমে ঢুকলাম। ঢোকে যা দেখার আশা করেছিলাম তাই দেখলাম। মৃতদেহটাকে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েটার শরীরে কোন পোষাক নেই। অত্যন্ত দামী পারফিউম ইউজ করে এই মেয়েটা। পারফিউমের দামের চেয়ে এই কম্বলের দাম আরো বেশি। এত দামী কম্বল একটা ছিনাল মেয়ে মানুষের গায়ে জড়ানো দেখে কম্বলে উপর আফসোস হলো। এই কম্বলের দাম ২ লাখ টাকার উপরে।
আমি কম্বলটা এমনভাবে প্যাকেট করলাম যাতে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে। অবশ্য মানুষের লাশ তো, একটা আকৃতি থেকেই যায়। প্রথমে ইচ্ছা হলো, বটি দিয়ে শরীরটাকে দুই ভাগে ভাগ করে কম্বলে প্যাঁচাই। কিন্তু স্যারেরা আবার কী মনে করেন তাই করলাম না। স্যারেরা অবাক হয়ে আমার কাজ কর্ম দেখতে লাগলেন। এসি টেম্পারেচার ১৮ ডিগ্রীর মধ্যেও ওনারা ঘামছেন।
বিল্ডিং এর গ্যারেজে স্যারের ৩ টা গাড়ী, এছাড়া স্যারের বন্ধুদেরও ৩ টা গাড়ী আছে। আমাকে একটা গাড়ীর চাবি দেয়া হলো। স্যারেরা আমাকে বললেন পথে তোমার গাড়ী যদি পুলিশ তল্লাশী করে এবং তুমি ধরা পড়ো তাহলে কোন চিন্তা করবে না। বলবে তুমি গাড়ীটা চুরি করেছ। লাশের দায়িত্বও তোমার। ২/৩ মাস জেলে খাটা কোন ব্যাপারই না। তোমার পরিবার পরিজন আজীবন যে টাকা পাবে তা জেলে বাইরে থেকে কামাতে পারবে না।” আমি অবশ্য জানি জেল থেকে বের করতে স্যারদের সময় লাগবে না। স্যারদের এমন পাওয়ার। এই প্রমোদ মহলে অনেক হোমড়া চোমড়া মন্ত্রী মিনিস্টারকে দেখেছি। আর স্যারেরা এখানে যে ৫ জন আছেন তার মধ্যে একজন এক মন্ত্রীর ছেলে।
রাস্তায় আমাকে কোথাও কেউ আটকায় নি। অবশ্য এত দামী গাড়ী কেউ আটকায় না। গাড়ী নিয়ে চলে গেলাম আমিনবাজারে, ময়লার ভাগারে। আমার পিছন পিছনে আরেকটা গাড়িতে স্যারেরাও ছিলেন।

পরদিন স্যার আমাকে নিয়ে ক্যাটস আইতে গেলেন। আমাকে অনেক পোষাক কিনে দিলেন। সেদিন মনে আছে, স্যার আমার শার্ট এর পেছনেই খরচ করলেন ২৮ হাজার টাকা অথচ আমি বেতনই পাই মোটে ১২ হাজার টাকা।
স্বপ্নে যখন নিচ্ছি তাহলে ভালোটাই নিতে হয়। আমিও বেশি দাম দেখে দেখে শার্ট প্যান্ট কিনলাম। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা স্বপ্নের মতই মনে হয়েছে। আমার বেতন রাতারাতি বেড়ে গেল। এক কালীন বেশ কিছু টাকাও আমাকে দেয়া হলো। মোট কথা আমি এক অনন্য উচ্চতায় উঠে গেলাম। আমি স্যারের গাড়ি চালানো শুরু করলাম। সব সময় না, শুধুমাত্র প্রমোদ ভ্রমনের সময় যে গাড়ী লাগে শুধু সেই সময়ের জন্য। গত এক মাস স্যারের সাথে দেশের নাম করা বার, পার্টি সেন্টার, ক্লাবে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এ জগতটা আরেক রঙ্গীন জগত যে জগত সম্মন্ধে সাধারণ মানুষের কোন ধারনাই নেই।

প্রথম যে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখলাম সেই রাতে ফ্ল্যাটে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। যে রুমে মেয়েটিক মারা গিয়েছে সেই রুমে ধ্বস্তাধস্তির শব্দ শুনলাম। শুনেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। বাসায় তো কেউ নেই! তাহলে ভেতরে কে? আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে সেই রুমে ঢুকলাম। কোন শব্দ নেই, লাইট জ্বালিয়ে ভালো করে দেখলাম কোথাও ধ্বস্তাধ্বস্তির কোন চিহ্ন দেখলাম না।

আমার সারারাত ঘুম আসল না। ছোটবেলা থেকে আমি ভূত বিশ্বাস করতাম না। অবশ্য শুধু ভূতই না, আমি অদৃশ্য কোন কিছুতেই বিশ্বাস করি না সেটা যাই হোক না কেন। কিন্তু শব্দটা কীসের শুনলাম।

পরদিন সারাবেলা ঘুমালাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। এদিকে স্যার থাইল্যান্ডে গিয়েছেন, আসবেন ৬ দিন পরে। এ সময় আমার কোন কাজ নেই। নাপা আর নিউসেপটিন খেয়ে জ্বর কমালাম। আরেকটা কথা, স্যার ইদানিং মদের বোতলের কোন হিসাব রাখেন না। আমিই এক জায়গা থেকে কিনে আনি, আমিই এর হিসাব রাখি। এর মধ্যে কয়েকটা বোতল হারিয়ে গেলে স্যারের খবরই থাকে না।
সেই রাতে আবার সেই দুঃস্বপ্ন দেখলাম। ঠিক আগের রাতে যা দেখেছিলাম। ঘুমানোর ঠিক কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই দুঃস্বপ্ন। সেই রুম থেকে শব্দ আসছে। আমি জানি গতকালের মত সেই রুমে গেলে আমি কিছুই দেখব না। সবই আমার মনের ভুল। আমি রুমে যাব না। যা হবার হবে।
কিন্তু শব্দটা বেড়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ভিতরে টাইফুন হয়ে যাচ্ছে। আমি এবার না গিয়ে পারলাম না। গতকালের মতই অবস্থা। ভেতরে কিছুই নেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ভেতরে কিছু একটা আছে। আমার ঘুম আসল না। শুধু তাই নয়, পরদিনও ঘুম আসে নাই। আমি একটা বোতল শেষ করলাম। স্যারের কাছে এই এক বোতলের হিসাব দেয়া যাবে।
আরেকটা বোতলের দিকে হাত বাড়াতেই নাকে পারফিউমের গন্ধ আসল। সেই মরা মেয়েটার গা থেকে যে পারফিউমের গন্ধ আসছিল ঠিক সেটাই। আমি চারিদিকে সন্ত্রস্ত হয়ে তাকালাম। না, কেউ কোথাও নেই, সবই আমার কল্পনা। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সেই রুম থেকে গন্ধটা আসছে। বুঝলেন তো কোন রুমের কথা বলছি? সেই রুম যে রুমে মেয়েটাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ধীর পায়ে সেই রুমের দিকে এগোলাম। পারফিউমের গন্ধটা আর কড়া হলো। রুমে ঢুকে কিছুই দেখলাম না। পারফিউমের ঘ্রাণও নেই।

আজ রাতে ঘুমানোর চেস্টা না করাই ভালো হবে। কারণ ঘুমানোর চেস্টা করলেই সেই রুম থেকে শব্দ আসবে। আমার আর ঘুমানো হবে না। মাঝে মাঝে দুই একবার চোখ বুঝে এসেছিল। প্রতিবারই সেই রুম থেকে শব্দ এসে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আমি জানি রুমে ঢুকলেই শব্দ বন্ধ হয়ে যাবে। ইচ্ছা করেই এবার রুমে গেলাম না। করুক না শব্দ, কেউ তো আমার ক্ষতি করছে না।

রুমের শব্দের চেয়ে পারফিউমের গন্ধ আমাকে এবার কস্টে ফেলল। এত দূর থেকে পারফিউমের গন্ধ নাকে আসার কথা না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেই পারফিউম গায়ে কেউ আমার আশেপাশে ঘরাঘোরি করছে। তারমানে সমস্যাটা আর সেই রুম অব্দি নাই। রুমের বাইরেও সমস্যাটা চলে এসেছে। পারফিউমের আক্রণে ৩য় রাত আমার ঘুম আসল না। পরদিনও ঘুম আসে নাই।

গুলশানের একটা ফার্মেসী থেকে ঘুমের ঔষধ কিনলাম। সে রাতে ঔষধেও কাজ হলো না। মনে হচ্ছে সেই মেয়েটা আমার আশেপাশেই হাটাহাটি করছে। আমি তার হাটার শব্দ পাই। আমি আরো দুইটা বোতল শেষ করলাম। মনে হচ্ছিল আমি যতক্ষন পান করছিলাম ততক্ষন মেয়েটা আমার পাশেই ছিল। আমি অবশ্য দুইটা গ্লাসে ঢালছিলাম। একটা গ্লাস নিজের জন্য আরেকটা গ্লাস……… নাহ, আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। যার অস্তিত্ব নাই তার জন্য মদ ঢালছি, মানুষ শুনলে আমাকে পাগল বলবে। অবশ্য এভাবে আর দুই রাত ঘুম না আসলে আমাকে পাগলই হতে হবে।

নির্ঘুম চতুর্থ রাতে মেয়েটি আমার সাথে কথা বলল শুধু তাই নয়, আমার সাথে মদও খেলো। আশেপাশে কাউকে দেখছি না কিন্তু কে আমার সাথে কথা বলেছে? মেয়েটা এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে, সাথে কড়া পারফিউমের গন্ধ আসছে। এবার তার জন্যেও আলাদা গ্লাসে মদ ঢেলেছি। অবাক হয়ে দেখলাম সেই গ্লাস খালি! অর্থাৎ মেয়েটা মদ খেয়েছে! আমার মনে কোন আতংক নেই। ভূত এসে আমার সাথে মদ খেয়েছে!
সে রাতে আমার জ্বর বেড়ে গিয়েছিল। সকালে কী মনে করে গত রাতের বারের রুমের সিসিটিভি ফুটেজ গুলো দেখলাম। যা আশা করেছিলাম তাই হলো। দুই গ্লাসে মদ ঢেলেছি আমি আবার খেয়েছিও আমি। তার মানে অশরীরি কেউ নেই। সবই আমার মনের কল্পনা।
এর মধ্যে স্যার আমাকে দুইবার ফোন দিলেন। পরশুর ফ্লাইটে তিনি আসবেন। এসেই সরাসরি এই ফ্ল্যাটে উঠবেন, পরে বাসায় যাবেন। একটা কথা বলা হয় নি। স্যারের বৌ অনেক সুন্দরী। বয়স স্যারের সমানই হবেন প্রায়।

পঞ্চম রাতে সেই মেয়েকে দেখলাম! সেই চিরচেনা অর্ধ উলঙ্গ ড্রেসে। কিন্তু মুখের পাশে রক্তের দাগ, যেটা কম্বল চাপা দেয়া অবস্থায় দেখেছিলাম। মেয়েটির সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বললাম। আমি জানি পুরোটাই আমার মনের কল্পনা। সকালে সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে বোঝা যাবে আমি নিজের সাথে নিজেই কথা বলছি। আজকেও মেয়েটিকে মদ দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। এই রাতটাও আমার নির্ঘুম কাটল। মেয়েটা গত রাতে আমাকে একটা অনুরোধ করেছে। এও বলেছে এই অনুরোধ রক্ষা করতে পারলে আমি স্বাভাবিক মানুষের মত ঘুমাতে পারব। অনুরোধ শুনতেই মেয়েটাকে না করে দিলাম। আমি কাউকে খুন করতে পারব না। তাও এমন একজন মানুষকে যিনি আমাকে কুকুরের চেয়েও বিশ্বস্ত মনে করেন।
৫ টা রাত ঘুম না আসার কারণে আমার চেহারা হয়েছে দেখার মত। শরীর আর চলছে না। সব সময় একটা তীব্র মাথা ব্যাথা নিয়ে ঘুরছি। আমার ঘুমানো জরুরি। ঘুম না আসলে আমি মরেই যাব। ফার্মেসীতে গিয়ে আরো কিছু ঘুমের ঔষধ কিনলাম। কিন্তু আজ রাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। মাথায় তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথাটা ছিড়ে যাবে। আমি মেয়েটার প্রস্তাবটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম।

স্যার আমাকে দেখে অবাক হলেন। আমার চেহারা হয়েছে নাকি রাস্তার পাগলদের মত। যদিও সকালে শেইভ করেছি কিন্তু তবুও স্যারের কাছে চেহারা লুকাতে পারলাম না। স্যার বললেন “শোনো, আজ রাতে আমরা ৪ জন আসছি। তুমি ৪ জনের খাবারের ব্যবস্থা করো।”

স্যার রুমে ঢুকেই ফ্রেশ হলেন। বাথরুম থেকে বের হয়েই পানি খেলেন। স্যার আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বললেন। আমি চা বসিয়ে দিয়েছি। স্যার চা খেতে চেয়েছিলেন। আমার ধারনা চা হতে হতে স্যার ঘুমিয়ে পড়বেন এবং এটা হবে স্যারের শেষ ঘুম। আশা করি ঘুমের ঔষধগুলো ভালোই কাজ করবে।

This Post Has One Comment

  1. Vania Knudson

    I always emailed this blog post page to all my friends, because if like to read it
    after that my links will too.

Leave a Reply