করোনা ও বাংলাদেশ

  • Post author:

বাংলাদেশের করোনা। এখনই প্রতিরোধ।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে কোন সন্দেহ নেই, আমরা সবাই তা বিশ্বাসও করি। কিন্তু পৃথিবীর করোনা বায়োস্টাটিস্টিক দেখে অনুমান করা যায় বাংলাদেশ করোনা প্ৰবৃদ্ধিতেও ইতালিকে ছাড়িয়ে যাবে, এটি আমরা চাইও না আর বিশ্বাসও করতে চাইনা।

কিন্তু কোন বায়োস্টাটিস্টিক দেখে বিশেষজ্ঞরা এই ভয় পাচ্ছেন?

অংকটি দেখুন খেয়াল করুন।

ইতালিতে ৩০ শে জানুয়ারি প্রথমে দুটি করোনা কেসের রোগী ধরা পড়লো। তারা পৃথিবীর সবাইকে জানালো।

২১শে ফেব্রুয়ারি মিললো ৪টি রোগী। পরের দিন
২২শে ফেব্রুয়ারি আসলো ২০টি কেস। এইভাবে
২৩ ফেব্রুয়ারি ৭৯,
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৫০,
২৫ ফেব্রুয়ারি ৩২২,
২৬ ফেব্রুয়ারি ৪০০,
২৭ ফেব্রুয়ারি ৬৫৫,
২৮ ফেব্রুয়ারি ৮৮৮,
০১ মার্চ ১৫৭৭,
০২ মার্চ ১৮৩৫,
০৩ মার্চ ২২৬৩,
০৫ মার্চ ৩৮৫৮,
০৬ মার্চ ৪৬৩৬,
০৮ মার্চ ৭৩৭৫ রোগী এবং একই দিনে মৃত ৩৬৬।

পরের দিন উত্তর ইতালির ১৬ লক্ষ জনগনের মেলামেশা, চলাচল, সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করা হলো আর্মি দিয়ে।

০৯ মার্চ রোগী ৯১৭২ মৃত্যু ৪৬৩, তখন পুরো দেশ লকডাউন করা হলো। তাতেও লাভ হলোনা।

১০ মার্চ ১০১৪৯ মৃত ৬৩১,
১১ মার্চ ১২৪৬২- মৃত ৮২৭,
১৩ মার্চ ১৫০০০ -১৪০০ মৃত্যু।

লক্ষ্য করুন, এই ভয়াবহ মৃত্যুর খেলা শুরু হয়েছিল মাত্র ২৫ দিন আগে তখন ইতালি বলেছিলো, আমাদের মাত্র ৪জন রোগী আছে।

ইতালীর করোনা যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার প্রধান কারণগুলির একটি হ’ল ইতালিতে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগে বিলম্ব হওয়া।

চীনের পরে ইটালিতে করোনা রোগ এখন পুরোপুরি মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং ডাব্লুএইচও ঘোষণা করেছে একইভাবে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই মহামারী চালু হবে।

অন্যান্য দেশের বায়োস্টাটিস্টিক অনুসরণ করে ডাব্লুএইচওর মতে ইটালির এখন তৃতীয় পর্যায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পর্যায় চলছে।

ভারত ও পাকিস্তান প্রথম স্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ২য় পর্যায়টি তাদের খুব কাছে চলে এসেছে। চীন এই মহামারী শুরু করেছে আবার শেষ করার পথও বিশ্বকে দেখিয়েছে। এই মহামারীটির নিয়ন্ত্রণ শুধু একটি ফর্মুলায়, — সেটি হলো সাবধানতা, কারণ, কোভিড ১৯ রোগের কোনও ওষুধ নেই। আমেরিকা যে ভ্যাকসিন আজ ৪ জনকে দিয়েছে তার ফাইনাল ফল পেতে লাগবে দেড় বছর।

উপরোক্ত বায়োস্টাটিস্টিক অনুযায়ী আগামী ৩০ দিন বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়।

আমাদের একটিই বাঁচার পথ, সেটি হচ্ছে সাবধানতা। সবাইকে যথাসম্ভব বাড়ীতে থাকতে হবে। ডাব্লুএইচওর পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে থাকার সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করা কোভিড ১৯ ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারি। তিন দিন আগে মালয়েশিয়ায় তবলীগ জামাতে কয়েক হাজার লোক জমায়েত হলে প্রায় শেষ হওয়া মহামারী আবার চালু হয়েছে এবং এখন তারা পুরো দেশ লকডাউন করেছে।

বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল। হাজার দুয়েক পিএসার টেস্ট কিট আছে আইইডিসিয়ারের কাছে। আমাদের গ্রেড ফোর নেগেটিভ প্রেসার ল্যাবরেটরি নেই। ভাইরাস টাইপ ডিটেক্ট করার ল্যাবরেটরি আমাদের নেই। আমাদের ডাক্তারদের সঠিক প্রতিরোধমূলক ড্রেস নেই। আগেই বলেছি এই রোগের ওষুধ পৃথিবীর কারো কাছে নেই।

তাই আমাদের উচিত হবে ডাব্লুএইচওর প্রটোকলে শুধু স্কুল নয়, আজকেই পুরো দেশকে লক ডাউন করা। শুধু রোজ খেটে খাওয়া মানুষদের রুজির ব্যবস্থা করতে হবে। পনেরদিন আমরা সব মানুষকে বাড়িতে আটকিয়ে রাখতে পারলে এই অদৃশ্য ভয়ানক মারণাস্র থেকে রক্ষা পেতে পারি। যারা সিদ্ধান্ত নেন তাদের নজরে এই পোস্টটি পড়ুক সেই কামনা করি।

লেখক: আরিফুর রহমান

Leave a Reply