আমাদের নব্য পশু সমাজ

  • Post author:

এক বনে চিতাবাঘ ছিলো। নিজের মনের মতো ঘুরে বেড়াতো। অন্য কোনো প্রাণীকে ব্যাঘাত ঘটাতো না। বনের রাজা সিংহ। বন জুড়ে শান্তি। কোথাও কোনো সমস্যা নিয়ে। সকলে মিলেমিশে থাকে। রাতে গল্প জুড়ে সময় কাটায়।

একদিন সেই বনে বাইরের বন থেকে শিয়াল এলো, কুকুর এলো, হায়েনা এলো। তারা, যার যার বন থেকে বিতারিত নানা কুকর্মের জন্য। এই বনে এসে তারা মহা খুশী। শান্ত পরিবেশ। বন জুড়ে খাবার। তারা চিতা বাঘের সামনে যায়, চিতা কিছু বলে না। হাতির পালে যায়, তাদের শক্তি দেখে। কুমিরের খালে যায়, তাদের প্রতাপ দেখে। কুকুর, শিয়াল, হায়েনা বুদ্ধি আটে। তাদের ক্ষমতা দরকার। তারা যায় সিংহের কাছে। জানায়, মহারাজ, রাজ্য জুড়ে বিশৃংখলা। পশুরা আপনাকে ভয় পায়না। যেন তেন ভাবে বনের খাবার খায়। এটা তো চলতে পারেনা। সিংহ ভেবে দেখে কথা সঠিক। তিনি কুকুর, শেয়াল ও হায়েনাকে তার বনের সমস্যা নির্ধারণ করতে ৩ সদস্যের এক কমিটি করে দেয়। দিন যায়। কমিটি রিপোর্ট দেয়। আহা! রাজ্য জুড়ে সমস্যা। তিনি আগে লক্ষ্য করেননি। তার নতুন তিন মিত্র তার চোখ খুলে দেয়। তিনি রাজ্য তদারকির ভার তিন নেতাকে দিলেন। তারা খাবার ব্যবস্থাপনা করে, বনের থাকার নিয়ম করে, বিচার বিভাগ করে। সিংহের সহচর হিসেবে সবাই সমীহ করে তাদের। তাদের সকলে জোগাড় করা খাবারের ভাগ দেয়। আহা! সুখ!

একদিন তিন নেতা খেয়াল করে, আরে চিতা তো খাবার ভাগ দেয়না। আর তারা কেউই চিতার সামনে দাড়াতে পারে না। তারা ফন্দি আটে। বিচার যায় সিংহের কাছে। বিচারে সকলে উপস্থিত। নতুন করে কুকুর, শেয়াল, হায়েনার পাচাটা পেয়াদা গুবড়ে পোকা, শকুন আর গিরগিটিও জুটেছে সাক্ষী হিসেবে। সিংহ হুংকার দেয়। কে রে তুই চিতাবাঘ? কোন বন থেকে এসেছিস? আমার বনের নিয়ম মানিস না।
চিতাবাঘ বলে, মহারাজ, এই বনের প্রথম যখন শুকরের হানা হয়, আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আমি প্রতিরক্ষা করেছি। গিরগিটারা যখন আমাদের বাসা তছনছ করে, আমি তাদের তাড়িয়েছি। আর বহিরাগত কুকুর, শেয়াল, হায়েনার সামনে আজ আপনি আমাকে চেনেন না, কোথা থেকে এসেছি জানতে চান। এখন ওরা এই বনের আর আমি কে? খেকিয়ে উঠে হায়েনা, আগের কথা বাদ। এখন কিভাবে বন চলবে, তার দেখভাল আমরা করি। তুমি অবাধ্য। আবাসন গাছ হারায় চিতাবাঘ, খাদ্য ভান্ডার লুটে নেয় হায়েনা।সিংহ প্রশান্তির নি:শ্বাস ছাড়ে। বনে শুনশান পরিবেশ। আহা! শাসন ব্যবস্থা।

দুই বর্ষা পরে বনে আসে নেকড়ের পাল।
ছুটে পালায় কুকুর।
গর্তে লেজ লুকায় শেয়াল।
মরা নদী পাড়ি দেয় হায়েনা।

সিংহ দাঁড়ায় একলা।
তার সেই শান্ত বন, আজ অশান্ত।

বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় চিতাবাঘ, কুমির, হাতি, ভাল্লুক। পিছিয়ে যায় নেকড়ে পাল।

বন থেকে বিতারিত হয় সিংহ,
একা সিংহ।
পাশে তার মিত্র কুকুর, শেয়াল, হায়েনা নেই। তারা আবার নতুন বনের খোজে নেমে পড়েছে। ক্ষমতাহীন সিংহের সংগ তাদের দরকার নেই। ক্ষমতার পালাবদলে হায়েনারা সিংহ হয়। ক্ষমতার পালা বদলে, তারাই লেজ গুটিয়ে পালায়।

চিতাবাঘ তার নিজের আবাসে বসে ঝিমুনি দেয়। আহা! আমাদের নব্য পশু সমাজ।

Leave a Reply