সারাদেশ-ব্যাপী মশক নিধনে বছর-ব্যাপী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্লান কি মুতাবেক প্রাক মৌসুম হিসেবে জানু-মার্চ বিশেষ ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়েছে। আর সেই ক্যাম্পেইনকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে মশার বাম্পার ফলন নাগরিক জীবনে বেদিশা করে ফেলেছে। বিকেল ৫টার পরে ঘরে-বাইরে, দোকান-পাটে, রাস্তায়-মাঠে, কোথাও দুদন্ড শান্তি নেই। মশার কয়েল, এস্প্রে, ব্যাট, ঘরোয়া টোটকা সবই ব্যর্থ। একমাত্র স্বস্তি মশারী। কিন্তু খানা-হাগা তো মশারীর ভেতর করা যায় না। এছাড়াও জীবিকার নানা কাজে মশারীর বাইরে আসতে হয়। মশার যন্ত্রনায় চর্ম রোগ, মশকবাহী রোগ ও কামড় যন্ত্রণা মহামারি আকার ধারণ করেছে।
কারণ কি?
এতো কর্মসূচী, বরাদ্ধ কই গেলো?
কোটি কোটি টাকা এখন লোপাট করা সহজ। তাই দুই সিটি কর্পোরেশনেই চুরির মহা উৎসব চলছে। লোক দেখানো দু-এক দিন কাউন্সিলরের বাড়ি ও আশে পাশে মশার কামান ধোয়া বাগিয়ে বিল উঠিয়ে লাপাত্তা।
দেখার কেউ নাই।
বিরোধী দল তো নেতৃত্ব শূন্যতায় শেষ।
ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত চাটুকারে সয়লাব।
সাধারণের কথা বলার কেউ নাই।
চলছে সার্কাস।
বংগবন্ধুর নাম বেচার খেলা।
বইমেলায় বই বেড়োয়, কোরআন হাদিসের আলোকে জাতির জনক,
স্কুলে মেয়েরা মুখোশ পড়ে দিপু মনিকে স্বাগত জানায়,
ভবনের নাম তার নামে রেখে রহ: পদবী দেয়া হয়। চাটুকারের সয়লাব চারপাশ।
শুধু উপরের নেতার পা চেটে এভাবেই বস্তি থেকে উঠে আসা ছেলে এলাকার ভাই পদবী পায়, কোটি টাকা সিন্ধুকে ভরে।
মূর্খ, চাদাবাজ, অন্যান্য দল করা মানুষও এখন মুজিব কোট পড়ে নব্য লীগি হয়ে যায়।
রাজনীতি এখন সমাজ সেবা নয়, পকেট সেবা। তাই গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি দাম বাড়লেও কথা বলার কেউ নাই। মন্ত্রী, এমপি, সচিবরাও আছে কামানোত ধান্দায়।
তাই প্রিয় জনগন, মশার কামড় খান ও কবি নজরুলের সাহেব ও মোসাহেব কবিতা খানা পড়ুন-
সাহেব কহেন, “চমৎকার ! সে চমৎকার !”
মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে !
হুজুরের মতে অমত কার ?”
সাহেব কহেন, “কী চমৎকার,
বলতেই দাও, আহা হা।”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের কথা
শুনেই বুঝেছি, বাহাহা বাহাহা বাহাহা!”
সাহেব কহেন, ”কথাটা কি জান ? সেদিন– ?
মোসাহেব বলে, “জানি না আবার ?
ঐ যে, কি বলে, যেদিন–”
সাহেব কহেন, ”যেদিন বিকেলে বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প।”
মোসাহেব বলে, “আহা হা, শুনেছ ?
কিবা অপরূপ গল্প !”
সাহেব কহেন ”আরে ম’লো ! আগে
বলতেই দাও গোড়াটা !
মোসাহেব বলে, “আহা-হা গোড়াটা !
হুজুরের গোড়া ! এই, চুপ, চুপ ছোঁড়াটা!”
সাহেব কহেন, ”কি বলছিলাম,
গোলমালে গেল গুলায়ে !”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের মাথা ! গুলাতেইহবে !
দিব কি হস্ত বুলায়ে !”
সাহেব কহেন, “শোনো না। সেদিন
সূর্য উঠেছে সকালে !”
মোসাহেব বলে, “সকালে সূর্য ?
আমরা কিন্তু দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে!”
সাহেব কহেন, “ভাবিলাম, যাই,
আসি খানিকটা বেড়ায়ে,”
মোসাহেব বলে, “অমন সকাল ! যাবে কোথা বাবা,
হুজুরের চোখ এড়ায়ে !”
সাহেব কহেন, “হ’ল না বেড়ানো,
ঘরেই রহিনু বসিয়া !”
মোসাহেব বলে, “আগেই বলেছি ! হুজুর কি চাষা,’
বেড়াবেন হাল চষিয়া ?”
সাহেব কহেন, “বসিয়া বসিয়া
পড়েছি কখন ঝিমায়ে !”
মোসাহেব বলে, “এই চুপ সব !
হুজুর ঝিমান ! পাখা কর্, ডাক্ নিমাইএ!”
সাহেব কহেন, “ঝিমাইনি, কই
এই ত জেগেই রয়েছি।”
মোসাহেব বলে, “হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা
আগেই সবারে কয়েছি !”
সাহেব কহেন, “জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত
হনুমান আর অপদেব !”
“হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা ?”
প্রণমিয়া কয় মোসাহেব।।