আগামী কাল সকালটা ভিন্ন রকম।
বিশেষ এক দিন।
১৯৯০ সালের জানুয়ারী মাসের কোনো এক সকালে (তারিখ মনে নাই), তৎকালীন স্বনামধন্য নবারুন কিন্ডারগার্টেন নামের একটি স্কুলে আব্বু আমাকে শিক্ষার্জনের জন্য ভর্তি করিয়েছিলেন। খুব সম্ভবত প্রথম সেইদিনে আপুও আমার সাথে ছিলো। সেখান থেকেই নার্সারি, কেজি, ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পড়েছি।
১৯৯৫ সালে শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয় এ চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হই। রোল নং ৩৩।
৫ম শ্রেণিতে ১ম স্থান দখল করি। ২০০২ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাশ করে বের হই। বরাবরই স্কুলে রেজাল্ট ১ম/২য় এর মাঝেই ছিলো, পাশাপাশি বার্ষিক ক্রীয়াতে, বিতর্কে, সাধারণ জ্ঞান কিংবা গান-নাটকে পারদর্শী হবার কারণে শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র ছিলাম, আর আব্বুর বুকের আনন্দের কারণ ছিলাম।
২০০৪ এ ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি।
২০০৪-০৫ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে গ্রাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করি। আমাদের ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১২ এর ফেব্রুয়ারি মাসে।
গ্রাজুয়েশনের সময় থেকেই খুব স্বপ্ন দেখতাম। সমাবর্তন হবে। আব্বু ও মাকে নিয়ে যাবো। ছবি তুলবো। ক্যাপ টা আব্বুর মাথায় দিয়ে বলবো, এই নাও, এটা শুধু তোমার জন্য। সার্টিফিকেট মায়ের হাতে দিবো। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগের বিনিময়ে, আমার মতো অক্ষরহীন শিশু ২২বছরের পরিক্রমা শেষ করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা স্তর পাড় করতে সক্ষম হয়েছে। জীবনে চলার জন্য যোগ্য হয়েছে। কত বিনিদ্র রাত আমার বাবা-মা পাড় করেছেন। নিজেদের শখ, চাহিদা রেখে, আমার জন্য শিক্ষা সামগ্রী, পোষাক, খাদ্য সংস্থান করেছেন। আমার এই অর্জন, তাদের দুজনার অর্জন।
আব্বু আমার পোষ্ট গ্রাজুয়েশন রেজাল্ট দেখেছেন। দেখেছেন, ছোট উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসায় নিযুক্ত হতে। আর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৯তারিখে, সংসারের বট ছায়া থেকে, তার ইহলোক ত্যাগ। নিশ্চয় আজ তিনি খুব উচ্ছাসিত হতেন। রাষ্ট্রপতি আসা, পোষাক, উদযাপন নিয়ে উপদেশ দিতেন। হয়তো রাতে তার বন্ধুদের কাছে আমাকে নিয়ে কথা বলতেন। হয়তো….
আর কোনো শব্দ নেই।
হয়তো শব্দ ছাড়া।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর ১ম সমাবর্তন।
প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
বিশাল আয়োজন।
তবু কেন শূন্যতা!!!