পর্বঃ ০১
রেখার সাথে সমুদ্রের দেখা আজিমপুর কবরস্থানের গেইটে।
লিকলিকে গড়নের একটা ছেলে, প্যান্টের নীচে কাদা মাখামাখি অবস্থায় বেরুচ্ছে। লম্বা চুল, শুকনো চিমটানো চোয়াল, কালচে গায়ের রঙ আর জ্বলজ্বলে চোখ সমুদ্রের। যে কেউ রাস্তায় ওকে দেখলেই অবাক হয়ে তাকায় এটা সমুদ্র জানে। প্রথমে সবাই তাকায়, সমুদ্র একটু বেশি কালো তাই তারপরে তাকায় কালো একটা ছেলের দুটো চোখ এতো গভীর জ্বলজ্বলে সুন্দর তাই।
রেখা অবশ্য তার কারণে তাকায়নি। রেখা তাকিয়েছে চমকে উঠে। শফিক মারা গেছে আজ তিন দিন, প্রতিদিনই এই বিকেল নাগাদ রেখা কবরস্থানের গেইটে দাঁড়ায়। ভেতরে যাওয়ার সাহস করেনা। প্রথমতঃ কবরস্থানে মেয়েদের প্রবেশের কিছু বিধি নিষেধ আছে, যা রেখা থোরাই কেয়ার করে। রেখা প্রবেশ করে না, শফিকের পরিবারের মানুষের সাথে চোখাচোখী যেন না হয়, সেই কারণে।
শফিককে গত শনিবার তার ঘরে সকালে নিথর অবস্থায় পাওয়া যায়। সুঠাম দেহের চব্বিশ বছরের স্বপ্ন ভরা একটা যুবকের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার। রেখার কাছে খবর আসে দুপুরের দিকে, ছুটে যায় রেখা। শফিকের শোকের মাতমের বাসায়, লোক গিজ গিজ করে। এদিক সেদিক কত মানুষ। রেখার বোধ কাজ করে না, সে রোবটের মতো ভেতর বাড়ির দিকে যায়। ওই যে উঠানে শুয়ে আছে শফিক, যেভাবে তার কোলে মাথা রাখতো, এই যে চুলে হাত বোলালে ফিরে তাকাবে। শফিক ফিরে তাকাবার আগেই তার পথ আগলে দাঁড়ায় শফিকের ছোট ভাই অয়ন। খুব তীক্ষ্ণ ভাষায় বলে এক পা আগে বাড়াবি না। তোর জন্যই আমার ভাই মরছে। কি আবোল তাবোল বলছে অয়ন। শোকে কি মাথা খারাপ হয়েছে। রেখার মাথা কাজ করে না, তার মাঝেই কে যেন হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে তাকে। এরমাঝেই মানুষের ফিসফাস চলে। বাকা চোখে সবাই তাকায় তার দিকে। সবাই যেন নীরবে বলতে চায়, রেখা তুই মেরেছিস শফিক কে। রেখার এসব কথায় তখন কিছু মনে হচ্ছিলো না। সে শুধু ভাবছিলো, একবার শফিকের সামনে গেলেই শফিক তাকাবে। শফিকের সামনে তার যাওয়া হয়নি। শনিবার বিকেলে পাচটায় আজিমপুর কবরস্থানে শফিককে কবর দিয়ে দেয় সবাই। শফিকের সবচে কাছের মানুষ তখন দাঁড়িয়ে থাকে কবরস্থানের গেইটে।
Next Part 5th February