হজরত আলী (রা) খাইবারের যুদ্ধে ইহুদীদের দুর্গের দরজা ভেঙ্গে তার ঢাল বানিয়েছিলেন, পরে নাকি ৪০ জন মানুষ ধরাধরি করে সেই দরজা মাটি থেকে উঠিয়েছিলো। ষাটের দশকে বরিশাল জিলা স্কুলে কোন ক্লাশে যেন আমাদের পাঠ্য বইতে পড়া এই কাহিনীটি মনের মধ্যে গেথে ছিলো বহুদিন।
১৯৭৭ সনে সৌদি আরবে আসার পর অনেক সৌদিকে জিগ্যেস করেছি খাইবার কেল্লা কোথায় বলতে পারো?
দাম্মাম, রিয়াদের কেউ কোনো খবর দিতে পারেনি। ১৪০০ বছর আগের যুদ্ধ সম্মন্ধে জানতে চাইলে দেখলাম তারা আমার চাইতেও কম জানে।
১৯৭৯ সনে রিয়াদের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের একটা অফিস তখন সমীচী এলাকাতে ছিল, খুঁজে পেতে অনেকক্ষণ লাগলো, কিনতু লাভ হলোনা।
—“ওয়াল্লাহে মানাদ্রী, এস আল খায়বার, ওয়েন হারব? মা এন্দেনা হারব তাউ,” আমার প্রশ্নের জবাবে খুব সন্দেহের নজর দিয়ে অফিসারটি যা বললেন তার অর্থ হলো, “আল্লার কসম আমি জানিনা, খাইবার কি, কোথায় যুদ্ধ ? ইদানিং কোথাও যুদ্ধ হয়নি।” পুলিশ না ডেকে বসে তাই ভয়ে ভেগে এলাম। খাইবারের দুর্গ কোথায় সে প্রশ্ন আমার মাথায় রয়ে গেলো।
নবী করিম (স) আল্লাহর হুকুমে মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করে আসার পরও কুরাইশদের অত্যচার আর ষড়যন্ত্র থেমে রইলনা। মদিনার তত্কালীন ধনী ইহুদী সম্প্রদায় একই দেশে থেকে, মুসলমানদের প্রতিবেশী হয়েও তাদের বিরুদ্ধে বাইরের শত্রুদের সহায়তা শুরু করলো গোপনে। এই ধরনের অত্যাচার যখন মুসলমানদের ওপর চলছিলো তখন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আয়াত নাজেল করলেন।
—“যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। তাদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায় ভাবে বের করা হয়েছে শুধু এজন্যে যে তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে আর এক দল দিয়ে বাধা না দিতেন তা হলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত (খ্রিস্টানদের) মঠ ও গির্জা, ধ্বংস হয়ে যেতো (ইহুদিদের) ভজনালয়, আর মসজিদ –যেখানে আল্লাহর নাম বেশি করে স্মরণ করা হয়; আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তার (ধর্মকে) সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী। (সুরা হজ,আয়াত ৩৯-৪০)।
আল্লাহর এই হুকুমের পর মুসলমানরা তলোয়ার উঠালো হাতে, কোনো দেশ দখলের জন্যে নয়, কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যে নয়, কোনো রাজনীতি বা মানুষ রচিত কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে নয়, শুধু “আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ” এই কথার ওপর বিশ্বাস পৃথিবীর বুকে প্রোথিত করার জন্যে। শুরু হলো প্রথম লড়াই, বদরের প্রান্তরে।
প্রায় খালি হাতে, খালি পায়ে ৩১৩ জন মুসলমান, অভুক্ত রোজা রাখা, অন্য দিকে ১০০০ ট্রেইনড কোরাইশ অস্রধারী সৈন্য। আল্লাহ বললেন, “আর বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছিলেন, তখন তোমরা ছিলে হীনবল। (সুরা আল ইমরান ১২৩)। আমি তোমাকে সাহায্য করবো এক সহস্র ফেরেস্তা দিয়ে যারা একের পর এক আসবে (সুরা আনফাল ৯)।
মুসলমানদের অভাবনীয় বিজয় দিলেন আল্লাহ। কিন্তু যারা অদৃশ্যে বিশ্বাসী হয়না, কোনো উদাহরণ, কোনো যুক্তি তাদের মনকে পরিবর্তন করাতে পারেনা।
তাই কোরাইশদের আক্রমন আর ইহুদিদের গোপন ষড়যন্ত্র থেমে রইলোনা। একের পর এক যুদ্ধ চলতে লাগলো ওহুদের, খন্দকের বড় বড় যুদ্ধ ছাড়াও ছোট খাট যুদ্ধ প্রায়ই করতে হতো মুসলমানদের।
ইহুদিদের সমস্যা ছিল দুটি, একটা হচ্ছে তাদের বানিজ্যিক আধিপত্য, আর একটা ঈর্ষা, —আরবদের থেকে কেন শেষ নবী হলো?
খন্দকের যুদ্ধে ইহুদি গোত্র বনু কোরাইজার জাতীয় ভাবে বেইমানির পর তাদের যুদ্ধ অপরাধের বিচার চাইলো মুসলমান শাসকরা। বনু কোরাইজা গোত্র থেকেই নির্ধারিত হলো ইহুদি বিচারক। তিনি নিজ গোত্রের প্রায় ৬০০ যুদ্ধপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেবার পর বাকি ইহুদিরা মদিনা থেকে মাইগ্রেট করে ৯৩ মাইল দুরে খায়বার মরুদ্যানে চলে যায়। প্রচুর পানি, উর্বরা মাটি, তাদের টেকনোলজি আর প্রচুর অর্থ খরচ করে বর্তমান ইসরাইলের মতো শক্তিশালী ছোট খাট একটা রাষ্ট্র বানালো তারা খাইবারে। ওদের অনেকগুলি স্টিল ইন্ডাস্ট্রী ছিল যেখানে আধুনিক অস্র তৈরী হতো।
মক্কার কুরাইশদের সাথে হোদায়বিয়ার অসম চুক্তি করার ফলে ইহুদিরা ধরে নিল, মুসলমানরা দুর্বল। তাই তারা সন্ত্রাসী অর্থায়ন করা শুরু করলো মদিনা আর খাইবারের মাঝখানে বেদুইন গোত্র গাত্ফানকে, যাতে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালায়। গাত্ফানরা প্রায়ই ঝামেলা করতো মুসলমানদের ওপর আক্রমন করে।
একবার উট চরানো অবস্থায় হজরত আবু জর গিফারী (রা)র ছেলে আর তার মাকে ধরে নিয়ে গেলো ওরা, ছেলেটাকে হত্যা করে গিফারী (রা) এর বিবি আর উট নিয়ে ওরা যখন ভেগে যাচ্ছিল তখন মুসলমানদের একটি টহলদারী পেট্রল তাদেরকে আটক করে এবং রিম্যান্ড জাতীয় অবস্থায় আটককৃত দুর্বৃত্তরা খাইবারের ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের কথা বলে দেয়।
এই ঘটনার পরে আল্লাহর নবী (স) আল্লাহর হুকুমে খাইবার আক্রমনের পরিকল্পনা করেন। মাত্র ১৪০০ থেকে ১৮০০ মুসলিম সেনা, সাথে ১০০ বা ২০০ ঘোড়া নিয়ে খাইবার অভিমুখে তিন দিনের যাত্রা শুরু হলো, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ মে মাস, ৭ই মহররম। খাইবারে তখন ১০,০০০ ইহুদি সৈন্য তাদের সুরক্ষিত দুর্গে; তাদের কাছে নিজেদের তৈরী করা অত্যাধুনিক অস্রসস্র। মুসলমানদের অভিযানের খবর পেয়ে ইতিমধ্যে গাত্ফান্ গোত্রের ৪ হাজার সৈন্য ইহুদিদের সাথে যোগ দেয়ার জন্যে খাইবারের পথে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু আলরাজি উপতক্যা মুসলমানরা দখল করেছে শুনে গাত্ফানরা নিজের এলাকায় ফিরে যায়। বলা হয়, তখন গাত্ফানদের কাফেলা আকাশ থেকে বার বার উচ্চ কণ্ঠের আওয়াজ শোনে, –তাদের বিপদ হবে যদি তারা খাইবার যায়, তাই নাকি তারা ফিরে আসে।
খাইবারে ইহুদিদের ৮ টি দুর্গ ছিল। মুসলমানদের অতর্কিত আক্রমনে নাতাত আর শিক্ক এলাকার সব দুর্গ পতন হয়, বাকি রয়ে যায় সুরক্ষিত আল কামুস দুর্গ।
মুসলমানদের অবরোধের মধ্যেও ইহুদিরা রাতের আধারে কামুস দুর্গে একত্রিত হয়। খাড়া পাহাড়ের ওপর এই দুর্গে হজরত আবু বকর প্রথমে, পরে হজরত ওমর (রা) ব্যার্থ আক্রমন চালান। তখন একদিন নবী (স) বললেন কাল প্রত্যুষে একজনকে আক্রমনে পাঠানো হবে যিনি আল্লাহ ও রসুলের প্রিয় এবং আল্লাহ ও রসুল তার প্রিয়; তিনিই কেল্লা ফতেহ করবেন ইনশাল্লাহ।
সকাল বেলা সবাই লাইনে দাড়ান সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি হওয়ার জন্যে–কারণ তারা জানতেন আল্লাহর নবীর কথা সব সময়ই সত্যি হয়। আলী (রা) তাঁর তাবুতে ছিলেন কারণ তেনার চোখে ইনফেকসন হয়েছিল। নবী (স) অসুস্থ আলীকে (রা) ডেকে নিয়ে এলেন এবং তাঁর হাতে দিলেন নবীর নিজের তরবারী জুলফিকার আর ইসলামের ঝান্ডা। বলা হয় নবী (স) এর দোয়াতে, তাঁর থুথুতে আলীর ( রা) চোখ সুস্থ হয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে।
সকাল বেলা যুদ্ধ শুরুর প্রারম্ভে কামুস দুর্গের গেটে ইহুদিদের বীর মারহাব এসে চ্যালেঞ্জ করলো আলী (রা)কে । বিশাল দেহের অধিকারী, সব যোদ্ধার ত্রাস, পুরো শরীর বর্ম দিয়ে ঢাকা, মাথায় কঠিন ইস্পাতের হেলমেট, তার ওপরে বসানো বিশাল এক হিরক খন্ড, যেটির ওপর পড়া আলো প্রতিফলিত হয়ে প্রতিদ্বন্দীর দৃষ্টি ঝলসে দেয়। তার একহাতে বিশাল দুধারী তলোয়ার আর এক হাতে ত্রিশুল জাতীয় বর্শা, এই অস্রগুলি মুসলমানরা কখনো দেখেনি। যুদ্ধের রীতি অনুযায়ী মৌখিক হুমকি ধমকি শেষে প্রথম ত্রিশুলের আঘাত প্রতিহত করতে যেয়ে আলী(রা) মাটিতে পরে যান, তার ঢাল কেটে যায়।
দ্বিতীয় আঘাত করেন আলী (রা)। হাই জাম্পের মতো লাফ দিয়ে শুন্যে উঠে তিনি এক কোপ মারেন, যাতে মারহাবের ইস্পাতের হেলমেট কেটে তার নিচের পাটির দাত পর্যন্ত দু ভাগ হয়ে যায়। বলা হয়, এরপর হুঙ্কার গিয়ে আলী (রা) দুর্গের বদ্ধ দরজা কব্জা সহ খুলে ফেলেন এবং ছুড়ে মারেন নিচে যা খাদের ওপর পড়ে একটি ব্রিজের মত হয়ে যায়। সেই সাময়িক ব্রিজের ওপর দিয়ে মুসলমানরা খাদ অতিক্রম করে আক্রমন করে কামুস দুর্গ, এবং এভাবে ইহুদিদের পুরো খায়বার এলাকা মুসলমানরা দখলে নেয়।
পুরো যুদ্ধে ১৯জন মুসলমান শহীদ হন আর ৯৩ জন ইহুদি প্রাণ হারায়। নবী (স) আলী (রা )কে উপাধি দিলেন আল্লাহর সিংহ –আসাদুল্লাহ।
আধুনিক ঐতিহাসিক মার্গুলীয়ুথ বলেন, আলীর তরবারির এক কোপ মুসলমানদের জন্যে প্রথম প্রাচুর্য্যের দ্বার খুলে দেয়। মা আয়েশা (রা) বলেছিলেন, খাইবার বিজয়ের পরে এত জিজিয়া আসতো যে আমরা প্রথমবারের মত পেট পুরে খেজুর খেতে পারতাম।
আজকাল ইহুদিদের ওয়েব সাইটে ইসলামিক এই যুদ্ধের কাহিনীকে অস্বীকার করা হয়, তাদের মতে একজন ইহুদি রাজাকার কামুস দুর্গে ঢোকার গোপন সুরঙ্গের দরজা খুলে দিয়ে ইহুদিদের হারিয়ে দেন।
আর সেই ভারী দরজা উঠাতে ৪০ জন লেগেছিল বলে যে কাহিনী চালু আছে-তা শিয়াদের সূত্রের। সুন্নী সূত্রে বলা হয়, আসলে ৮ জন মিলে
সেই দরজা উঠিয়েছিলেন।
মানুষরা যে যাই বলুক আর ভাবুক খাইবার নিয়ে আল্লাহতায়ালা তার ওয়াদা পূরণ করেছেন, আল্লাহ এই যুদ্ধ সম্মন্ধে বলেন,”আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তোমরা যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের অধিকারী হবে”(সুরা ফাত্হ, আয়াত ২০)। পরের আয়াতে মুসলমানদের ভবিষ্যত নিয়ে বলেন,—“আল্লাহ তোমাদের জন্যে আরো (বহু ধনসম্পদ) নির্ধারিত করে রেখেছেন যা এখনো তোমাদের অধিকারে আসেনি, যা আল্লাহর কাছে রাখা আছে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান”
বর্তমান পৃথিবীর মুসলমান হিসাবে জন্মগ্রহণ করা জাতীরা যখন আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী মুসলমান হবে তখন তারা আল্লাহর সহায়তা পাবে, না হয় এখনকার মত বিতর্কিত আর পরাজিত থাকবে।
খাইবারের যুদ্ধ আরো কয়েকটি কারণে গুরত্বপূর্ণ। নবী (স)কে ইহুদি নারী জয়নাব বিষ মেশানো মাংশ খাইয়েছিলো তা এই যুদ্ধের পরে খাইবারেই ঘটেছিল।
হজরত আলী (রা) এর আপন ভাই জাফর বিন আবি তালিব ১৪ বছর আবিসিনিয়া প্রবাসী থেকে সেই বিজয় দিবসেই সোজা খাইবার পৌঁছে যান। নবী (স) তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, “বুঝতে পারছিনা কোনটা বেশি আনন্দের,—খাইবার বিজয় নাকি তোমাকে ফিরে পাওয়া”।
খাইবার যুদ্ধের ওপর সালমান বিন আকওয়া বর্ণিত একটি হাদীস বর্তমান পৃথিবীর ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে সব চেয়ে বেশি গুরত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমার ভাই আমের খাইবারের যুদ্ধে নবী(স) এর পাশে কঠিন ভাবে যুদ্ধ করছিলেন, তখন দুর্ঘটনাক্রমে তার নিজের তলোয়ারের আঘাতে তার নিজের মৃত্যু হয়। অনেক সাহাবা সন্দেহ করে বলাবলি শুরু করলেন, উনি কি আত্মঘাতী নাকি শহীদ? আত্মঘাতী হলে তিনি জাহান্নামী।
সালমান বলেন, খাইবার যুদ্ধের পর আমরা মদিনা ফিরে গেলে আমি নবী (স) এর সামনে আল্লাহর প্রশংসা মূলক একটি কবিতা পড়ি। তখন হুজুর (স ) বললেন, কে লিখেছে এই সুন্দর কবিতা?
বললাম, আমার ভাই, আমের। আরো বললাম, হুজুর, অনেকে তাঁকে আত্মঘাতী ভাবে তাই তার জন্যে “আল্লাহ ইউরহামু” বলে দোয়া করে কথা বলেনা।
নবী (স) বললেন, “উনি মারা গেছেন আল্লাহর একজন উপাসনাকারী এবং সৈনিক হিসাবে, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন।”
সহিহ মুসলিমে এই ব্যপারে বলা হয়েছে, নবী (স) তার দু আঙ্গুল তখন একত্রিত করে বলেছিলেন, “তার জন্যে দুটো পুরস্কার, একটি আল্লাহর উপাসনাকারী হিসাবে, আর একটি আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করার জন্যে।”
বর্তমানে যারা মুসলমানদের জঙ্গি হয়ে আত্মঘাতী হতে উৎসাহিত করেন, তারা কি এই হাদিস সম্মন্ধে অবগত আছেন?
খাইবারের যুদ্ধের এই পরিষ্কার কাহিনী সবচেয়ে বড় দলিল যে ইসলাম ধর্ম আত্মঘাতী হামলা সমর্থন করেনা। পরবর্তীতে যারা এটিকে সমর্থন দিয়েছেন তাঁরা তাতারীদের বাগদাদ দখলের সময়কার আত্মঘাতী ভুল সিদ্ধান্তকে রেফারেন্স দিয়ে ফতোয়া দেন, যা ইসলামিক পন্ডিতেরা আসলে এটিকে বিভ্রান্ত ভাবনা ও বিদয়াত মনে করেন। সেই আত্মঘাতী যুদ্ধে মুসলমানরা খেলাফত হারিয়েছিল, এখনও যারা এই পথ অবলম্বন করছে তারা কোন ভাবেই কোন সার্থকতা পাচ্ছেনা শুধু নিরীহ জীবন বিনাশ করা ছাড়া।
যাইহোক আমার খাইবার কেল্লা খুঁজে পাওয়ার অবসান ঘটলো ১৯৮১ সনে দুর্ঘটনাক্রমে। মদিনা থেকে তাবুক যাচ্ছিলাম ড্রাইভ করে। নির্জন সিঙ্গেল রোডের পাশে আরবিতে খাইবার লেখা একটি পেট্রল পাম্প দেখে গাড়ি থামালাম। গ্রামটি খাইবার হলেও কেল্লা সম্মন্ধে কেউ কিছু জানেনা।
পাশের মরুভূমিতে কিছু দুরে বেদুইন তাবু দেখে গাড়ী নিয়ে পৌছলাম। দেখি একজন বুড়ো সৌদি মাছি তাড়াচ্ছে, সালাম দিয়ে বসলাম। আমার কথা শুনে বুঝতে পারল, কি চাই আমি।
“আউয়াল মাররা হাসসাল্তু ওয়াহাদ ইয়াবগা শুফ কিলা “– বললো, জীবনে প্রথম একজনের সাথে দেখা হলো যে খাইবারের কেল্লা দেখতে চায়।
ডাক্তার শুনে আদর করে উটের দুধ খাইয়ে তার ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো আমার সাথে। রাস্তা বললে ভুল হবে, পাথর, বালি, জঙ্গল এর মধ্য দিয়ে একটি ট্র্যাক ধরে পৌছলাম খাইবারের ইহুদি নিবাসে। জীন পরী ভুত প্রেত ছাড়া একটা মানুষও থাকেনা বাড়িগুলিতে। পাথরের ওপর পাথর বসিয়ে কাদামাটি আর কাঠ দিয়ে বানানো সাড়ে ১৪ শত বছরের পুরনো বাড়িগুলি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মুসলমান বাহিনী যে নহরের পাশে সেনা শিবির স্থাপন করেছিল সেই নহর দিয়ে এখনো সুমিষ্ট পানি বয়ে যাচ্ছে। মন ভরে দেখলাম, সেই যুগের ফিল্ম ক্যামেরায় কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছিলাম, এখনো সংগ্রহে আছে। অবাক লেগেছিল, এত বড় গুরত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান, এভাবে পড়ে আছে !
১৯৯৭ সনে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি সৌদি আরবে ভিজিট করতে এসে আবদার ধরলেন উনি খাইবার দুর্গ দেখবেন, তাঁকে দেখানো হলো।
২০১৪ সনে আবার গিয়েছিলাম খাইবার। তখন ৬ ট্রাক হাইওয়ে মদিনা থেকে তাবুক। রাস্তা ভরা রোড সাইন। খাইবার তখন বিশাল শহর।
এইবার পেট্রল পাম্পের বাংলাদেশীকে কেল্লার কথা জিগ্যেস করতেই রাস্তা দেখিয়ে দিলো। এসফলটেড রাস্তা দিয়ে পৌছে গেলাম। পুরনো খাইবার এর সব কিছু, সব দুর্গ খুঁজে বের করা হয়েছে, এখন এটি একটি টুরিস্ট শহর। এখন ইরানি টুরিস্টরা দল বেঁধে আসে সেই আদি নহরের পানি নিয়ে যায়, কামুস দুর্গে পাহাড় বেয়ে উঠে আলী (রা) যে দরজা ভেঙেছিলেন সেখানে উঠে কান্নাকাটি করে।
১৯ জন শুহাদাদের কবরের চিহ্ন নেই, কিন্তু জায়গাটা চিন্হিত স্টিলের প্রতিবন্ধকতা দিয়ে, প্রতিবারই আমি সেখানে গেলে চিত্কার করে বলি, খাইবারের যুদ্ধের শহীদ সাহাবাগণ (রা), আমি বাংলাদেশের সব মুসলমানদের সালাম পৌঁছালাম আপনাদের কাছে, — আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলেল শুহাদা।
প্রতিবারই মনে হয়, দিক বিদিক প্রকম্পিত করে অযুত কন্ঠের স্বর্গীয় এক ধ্বনি প্রতিধ্বনি পাহাড়ে পাহাড়ে কন্দরে কন্দরে বেজে ওঠার অলৌকিক শব্দ শুনি, —ওয়াআলাইকুম সালাম, বাংলাদেশ, ওয়া আলাইকুম সালাম আখোয়ান।
আল্লাহকে বলি, হে রাব্বুল আলামীন, এই খাইবার যে মুসলমানেরা দখল করেছিলো তারা ইহুদি সৈন্য সংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র ছিল। আজ পৃথিবীতে দুই শত কোটি মুসলমান মাত্র এক কোটির কম ইহুদিদের কাছে পরাজিত হচ্ছে প্রতিদিন।
হে আল্লাহ, কবে আমরা সেই মুসলিম হবো যারা সাহাবাদের মত নামাজের শক্তি কোরআনের শক্তি আর ঈমানের শক্তির উপর নির্ভর করে পৃথিবীকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করবে?
নবী(স) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী মুসলমান আর ইহুদিদের সর্বশেষ একটি লড়াই হবে দাজ্জালের আবির্ভাবের পড়ে, তখনই ইহুদীরা চিরতরে পরাজিত হবে। ইহুদি আছে, দাজ্জালও আছে লুকিয়ে কোথাও, শুধু আল্লাহর সেই খাঁটি মুসলমানরা নেই, সেই মুমিনদের অপেক্ষায় আল্লাহর পৃথিবী থমকে আছে।
২০১৬ সনে আবার গিয়েছিলাম খাইবারে ভিডিও ডকুমেন্টারি করতে। “নবীর দেশে পথিক বেশে” গুগল বা ইউটিউবে সার্চ দিলে ত্রিশটি পর্ব পাবেন। ৫ ও ৬ নম্বর পর্ব খাইবার নিয়ে করা যা গত দুবছর আমরা রমজানে দেখিয়েছি বাংলাদেশের কয়েকটি চ্যানেলে।
আজকে আবার লিখলাম। জেদ্দার ফুজি ফিল্ম ক্লাবের সদস্য বন্ধু পিটার ( Peter Fuji Film Club) খাইবারের অনেকগুলি সুন্দর স্থির চিত্র নিয়েছে। মনে হলো বন্ধুদের ছবিগুলি দেখাই, সাথে আল্লাহর কিছু কথা বলি, তাই এই লম্বা লেখা।
লেখক: Arifur Rahman
Right here is the perfect website for anybody who
wants to understand this topic. You understand so
much its almost hard to argue with you (not that I really will need to…HaHa).
You definitely put a brand new spin on a topic which has been discussed for ages.
Wonderful stuff, just excellent!